বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১১

৪০ হাদিস সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর বানী

হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে, হে আল্লাহর রাসুল, ইসলামের কোন সিমায় পৌছুলে কেউ ফকীহ বা আলেম হতে পারে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তাদের দ্বীনের ব্যাপারে ৪০টি হাদিস ইয়াদ করেছে (এবং অপরকে তা পৌছিয়েছে) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফকীহ রূপে উঠাবেন। এ ছাড়া কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সালী হব। -বায়হাকী, মিশকাত-৩৬
নামায
১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, বান্দার ঈমান ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ করা। -আহমদ।
২।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল হল ওয়াক্তমত নামায় আদায় করা।- বোখারী। 
৩।   সালমান ফারসী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে, ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে চল্লিশ দিন যাবত প্রথম তাকবীরের সাথে জামাতে নামায পড়বে, তার জন্য দু’টি  পরওয়ানা লেখা হয়, একটি জাহান্নম থেকে অপরটি মোনাফেকী থেকে মুক্তির।- তিরমিযী।
৪।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযূ করে নামায পড়ার আশায় মসজিদের দিকে যায়, অথচ মসজিদে গিয়ে দেখে জামাত শেষ, তবু সে জামাতের সওয়াব পাবে।- আবু দাউদ।
৫।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যতক্ষণ মানুষ নামাষের প্রতীক্ষায় থাকে, ততক্ষণ নামাযের সওয়াব লাভ করতে থাকে।- বোখারী, মুসলিম।

৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যারা রাতের অন্ধকারে বেশি বেশি মসজিদে গমন করে, তাদের কেয়ামতের দিন পূর্ণ নূরের সূসংবাদ দান কর।- ইবনে মাজা।
৭।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন বান্দার আ’মলসমূহ থেকে সর্বপ্রথম ফরয নামাযসের হিসাব নেওয়া হবে।- তিরমিযী।
৮।   রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে নামাযের কেরাআত লম্বা তাই শ্রেষ্ঠ নামায।- বায়হাকী।
৯।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শীতের সময় নামায আদায় করতে অভ্যস্ত, সে জান্নতী।- বোখারী।
১০।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি জামাতে নামাযের মাত্র এক রাকাত পেলেই সে জামাতের সওয়াব পেয়েছে।- বোখারী।
১১।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আছরের নামায ছেড়ে দিয়েছে, তার সব নেক আ’মল বরবাদ হয়ে গেছে।- বোখারী।
১২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামায ভূলে যায়, স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করবে, তা না করলে এ গুনাহ মাফ করাবার কোন উপায় নেই।- বোখারী।
১৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, লোকেরা যদি ফজর ও এশার নামায জামাতে পড়ার ফযীলত জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাযদ্বয়ের জামাতে হাজির হত।- বোখারী।
১৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।- বোখারী।
১৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সাত প্রকার মানুষকে আল্লাহ পাক ছায়া দান করবেন, যার মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে, যাদের মন নামাযের ওয়াক্তের সাথে লটকে থাকে, কখন নামাযের ওয়াক্ত হবে এবং মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করবে।- বোখারী।
১৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল মসজিদে যায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য প্রতি সকালে বিকালে ওই পরিশ্রমের প্রতিফলস্বরূপ বেহেশতে মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরী করে রাখেন।- বোখারী।
১৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ইমাম আল-হামদু সূরা শেষ করে যখন আমীন বলবে, তুমিও তখন আমীন বলো, এ সময় ফেরেশতাগণ আমীন বলে থাকেন। যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে হবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।- বোখারী।
১৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ পাক সাত অঙ্গের উপর সেজদা করতে আদেশ করেছেন। দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পায়ের সম্মুখভাগ এবং কপালের সঙ্গে নাকেও ইশারা করে দেখিয়েছেন। আরো আদেশ করেছেন, কাপড় ও মাথার চুল টেনে রাখবে না ।- বোখারী।
১৯।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা সুন্দররূপে স্থিরতার সাথে সেজদা করো। সেজদার সময় দুই হাত কুকুরের ন্যায় যমীনের উপর বিছিয়ে দিও না ।- বোখারী।
২০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, সে কি ভয়ংকর যে ইমামের আগে মাথা উঠায়? আল্লাহ তার মাথা গাধার মাথার ন্যায় করে দিতে পারেন।- বোখারী।
২১।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যারা কাতারের ডান দিকে থাকেন, নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতগণ তাদের উপর দরূদ পাঠান।-আবু দাউদ।
২২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের প্রতি নির্ধারিত পাঁচটি নামায পড়, এতে তোমরা তোমাদের রবের বেহেশতে প্রবেশ করবে।- আহমদ, তিরমিযী।
২৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের সন্তানদের নামাযের জন্য আদেশ করবে যখন তাদের বয়স সাত বছরে পৌঁছবে, আর নামাযের জন্য পিটাবে যখন বয়স দশ বছর হবে।- আবু দাউদ।
২৪।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমাদের ও মোনাফেকদের মাঝে যে পার্থক্য রয়েছে তা হচ্ছে নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করবে সে প্রকাশ্য কাফের হয়ে যাবে।- আহ্মদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজা।
২৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যার আছরের নামায ছুটে গেল, তার পরিবার ও সব ধন-সম্পদ যেন লুট হয়ে গেল।- তিরমিযী।
২৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে এশার নামায জামাতের সাথে পড়েছে, সে যেন অর্ধরাত নামায পড়েছে, আর যে ফজরের নামায জামাতে পড়েছে সে যেন পূর্ণ রাত নামায পড়েছে।- ইবনে মাজা।
২৭।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে সকালে ফজরের নামাযের দিকে গেল সে ঈমানের পাতাকা আর যে সকালে নামায না পড়ে বাজারে গের সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল।- ইবনে মাজা।
২৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির নামায ঠিক থাকবে, কেয়ামতের দিন তার সব আমলই ঠিক থাকবে।- বোখারী।
২৯।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ঘরে নামায পড়ে ঘরকেও ফযীলত দান কর।- বোখারী।
৩০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে লোক রুকু সেজদায় পিঠ সোজা করে না, তার নামায পূর্ণ হয় না।- বোখারী।
৩১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, একামতের সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। তখন সকর দোয়াকরীর দোয়াই কবুল করা হয়।- মেশকাত।
৩২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে পবিত্রতা হাসিল করে এবং সুগন্ধ ব্যবহার করে মসজিদে যায়, আর কাউকে কষ্ট না দিয়ে যেখানে জায়গা পায় সেখানেই বসে যায়, ভাগ্যে লেখা পরিমাণ নামায পড়ে, চুপ করে ইমামের খোতবা শোনে, সে জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ কর দেয়া হয়।  বোখারী।
৩৩।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়া উত্তম। বসে পড়লে অর্ধেক সওয়াব আর শুয়ে পড়লে বসে পড়ার অর্ধেক সওয়াব।- বোখারী।
৩৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রথমতঃ নামায দাঁড়িয়ে পড়বে আর সম্ভব না হলে বসে পড়বে, তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে শোয়া অবস্থায় পড়বে।- বোখারী।
৩৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ও প্রিয় নামায হল দাউদ (আঃ)- এর নামায। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, রাতের তৃতীয়াংশে নামায পড়তেন এবং পুনরায় ষষ্ঠাংশে ঘুমাতেন।-বোখারী।
৩৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক রাতের যখন এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আল্লাহ পাক দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বান্দাকে আহবান করে বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব।- বোখারী।
৩৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, নামাযের মধ্যে ইমামকে কোন ঘটনায় সতর্ক করা আবশ্যক হলে পুরুষগণ সুবহানাল্লাহ বলবে।- বোখারী।
৩৮।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ নামাযে দাঁড়ালে শয়তান এসে নানা প্রকার বাধা সৃষ্টি করে, ফলে নামাযী কত রাকাত পড়েছে তা ভূলে যায়। কেউ এ অবস্থার সম্মুণীন হলে শেষ বৈঠকে দুটি সেজদা করবে।- বোখারী।
৩৯। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলা মুসাফির থেকে চিরতরে অর্ধেক নামায উঠিয়ে দিয়েছেন।- আবু দাউদ, তিরমিযী।
৪০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ফরয নামাযের পরে রাতের নামাযই শ্রেষ্ঠ।- মুসলিম।
রোযা
১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয় না, ক) ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়া,
            খ) ন্যায়বিচারক বাদশাহর দোয়া,
            গ) মজলুমের দোয়া।- আহমদ।
২।       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ পর্যন্ত (মিথ্যা ও গীবত দ্বারা) তা ফেড়ে না ফেলে।- নাসাঈ।
৩।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা এমন একটি মাস পেয়েছ, যাতে এমন এক রজনী রয়েছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম।
৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ক্বদরের রাত্রে জিব্রাঈল (আঃ) ফেরেশতাদের এক জামাত নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় যারা আল্লাহর যিকির এবং বিভিন্ন এবাদতে রত থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।- রায়হাকী।
৫। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারিখগুলোতে তোমরা শবে ক্বদর অনুসন্ধান কর। (বোখারী, হাদিস নং ১৮৯০)

৬।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, এতেকাফকারী সকল পাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এতবেশী নেকী লেখা হয় যেন সে সর্বপ্রকার সৎকাজ করেছে।- মেশকাত।
৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন রমযান মাস আসে তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানগুলোকে। (বোখারী-হাদিস নং ১৭৭৮,মুসলিম শরীফ-২৩৬২)
৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে, তন্মধ্যে একটির নাম রাইয়ান, রোযাদাররা ব্যতীত এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।- (বোখারী হাদিস নং ১৭৭৫)

৯।       হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে।- (বোখারী, হাদিস নং -১৭৮০)

১০।                      আমর ইবনুল আনাস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমাদের রোযা ও ইহুদী খৃষ্টানদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হল সেহ্রী খাওয়া।- মুসলিম।

১১।                        রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা তাতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা হল পবিত্রকারী।

- আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা।

১২।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করিয়েছে অথবা কোন গাজীকে জেহাদের সামগ্রী দান করেছে, তার জন্যও অনুরূপ সওয়াব রয়েছে।- তিরমিযী, নাসাঈ।

১৩।                      হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং মিথ্যাচার ছাড়ে নাই, তার রোযা রেখে খানপিনা ছেড়ে দেওয়ায় আল্লাহর কোন কাজ নাই।-

(বোখারী,হাদিস নং ১৭৮২)

১৪।                      হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে রোযা অবস্থায় ভুলে কিছু পানাহার করেছে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে, কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন পান করিয়েছেন।- (বোখারী,হাদিস নং ১৮০৯)

১৫।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন রোযা আল্লাহর নিকট রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে পরওয়ারদেগার, আমি দিনের বেয়ায় তাকে পানাহার ও প্রকৃত্তির কামনা বাসনা থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। অতএব সুপারিশ কবুল করা হবে।- বায়হাকী।

১৬।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযান মাসের শেষ রাতে তাঁর উম্মতকে মাফ করা হয়।- আহমদ।

১৭।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তিন জিনিস রোযাদারের রোযা নষ্ট করে না, শিঙ্গা লওয়া, অনিচ্ছাকৃত বমি এবং স্বপ্নদোষ।- তিরমিযী।

১৮।  হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যদি কেউ সফরে রোযা রাখতে চাও তা হলে রাখতে পার। আর চাইলে নাও রাখতে পার।- (বোখারী, হাদিস নং ১৮১৯)

১৯।                        হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে মরে গেছে আর তার ফরয রোযা কাজা রয়েছে, ওলী তার পক্ষে রোযা রাখবে।-(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৮)

২০।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে রমযানের রোযা মাথায় রেখে মৃত্যুবরণ করেছে, তার পক্ষ থকে প্রত্যক দিনের পরিবর্তে যেন একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো হয়।- তিরমিযী।

২১।                       হযরত আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযানের রোযা এবং পরে শাওয়ালের ছয় দিন রোযা রেখেছে, এটা তার পূর্ণ বছর রোযা রাখার সমনাব।- মুসলিম, হাদিস নং ২৬২৫)

২২।                       হযরত আবু সাঈদ খুদরী(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে আল্লাহর ওয়াস্তে একটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার চেহারা দোযখের আগুন থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন।

(মুসলিম, হাদিস নং ২৫৭৮)

২৩।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখে, আল্লাহ্ তার ও দোযখের মধ্যখানে একটি পরিখা সৃষ্টি করেন, যার এক পাড় থেকে অন্য পাড়ের দূরত্ব আসমান যমীনের মধ্যেকার দূরত্বেও সমান।

 তিরমিযী।

২৪।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসের যাকাত রয়েছে এবং শরীরের যাকাত হল রোযা।

 ইবনে মাজা।

২৫।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রোযা সবরের অর্ধেক এবং সবর ইসলামের অর্ধেক।

২৬।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, শবে কদর তালাশ করবে রমযানের নয় রাত অথবা সাত রাত বাকি থাকতে। অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে, অথবা, তিন রাত বাকি থাকতে।- তিরমিযী।

২৭।                       হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন, যদি আমি বুঝতে পারি, শবে কদর কোন তারিখে, তখন আমি কি করব? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তুমি বলবে, ইয়া আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা ভালবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।- আহমদ ইবনে মাজা, তিরমিযী।

২৮।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযান মাসের রোযা ওমরা হজ্জের সমান।- বোখারী, মুসলিম।

২৯।                      হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমযানের রাতে তার বিশেষ (তারাবীহ) নামায ঈমানী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সওয়াবের আশায় আদায় করবে,তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।-(বোখার, হাদিস নং ১৮৮৩)

৩০নং হাদিস থেকে ৫০ নং হাদিস বোখারী শরিফ হতে উদ্বৃত

৩০।                     হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত নবী করীম (স)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা রমযানের চাঁদ দেখলে রোযা রাখ এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখলে ইফতার কর। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তা হলে (ত্রিশ দিন) হিসাব কর। (বোখারী, হাদিস নং ১৭৭৯)

৩১।                      হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, যে ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় শবে কদরে নামায পড়বে এবং রমযানের রোযা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বোখারী, হাদিস নং ১৮৮৭)

৩২।                      হযরত আবূ বাকরা (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিনা  করেন, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, এমন দু’টি মাস আছে যার উভয়টিই ঘাটতি অর্থাৎ উনত্রিশ দিনে হয় না। আর তা হল ঈদের দু’টি মাস রমযান ও যিলহজ্জ। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯১)

৩৩। হযরত আবূ হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, তোমাদের কেউ রমযানের একদিন বা দু’দিন পূর্বে রোযা রাখবে না। তবে কেউ প্রতিমাসে এ তারিখে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হলে তবে রাখতে পার। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৩)

৩৪।                     হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বাড়ীতে পরিবার-পরিজনের সাথে সেহরী খেতাম। সেহরী খাওয়ার পর হযরত নবী করীম (স)Ñ এর সাথে ফজরের নামায পড়ার জন্য তাড়াহুড়া করে খেতাম। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৮)

৩৫।                     হযরত যায়িদ বিন সাবেত (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন আমরা হযরত নবী করীম (স)- এর সাথে সেহরী খেয়েছি। তারপর তিনি নামায পড়তে দাঁড়িয়েছেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি যায়েদ ইবনে সাবেত (রা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সেহরী ও আযানের মাঝখানে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মত সময়ের ব্যবধান ছিল। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৯)

৩৬।                      হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও। কেননা সেহরী খাওয়ায় বরকত লাভ হয়। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০১)

৩৭।                     উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেছেন রোযা অবস্থান হযরত নবী করীম (স) তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু দিতেন, একথা বলে তিনি হেসে দেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৫)

৩৮।                     হযরত আবদুর রহমান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি মারওয়ানকে জানিয়ে দেন, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ও উম্মে সালামা (রা) তাঁকে বলেছেন, হযরত নবী করীম (স) রাত্রে স্ত্রী সহবাসজনিত নাপাকী নিয়ে নিদ্রা যেতেন এবং এ অবস্থায়ই ফজরের নামাযের সময় হয়ে যেত। তিনি গোসল করতেন এবং নিয়ত করে রোযা রাখতেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৩)

৩৯।                      উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত, রমযান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়াই হযরত নবী করীম (স)- এর ফরয গোসলের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় ফজরের ওয়াক্ত হয়ে আসত। তিনি গোসল করতেন এবং রোযার নিয়ত করতেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৮)

৪০।                        হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, রোযাদার যদি ভূল করে কিছু খায় বা পান করে, তা হলে সে যেন রোযা পূর্ন করে। কেননা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় সে পানাহার করেছেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৯)

৪১।                      হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) এহ্রাম এবং রোযা অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়েছেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮১৪)

৪২।                      উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন হামযা ইবনে আমরুল আসলামী (রা) অধিক মাত্রায় রোযা রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি হযরত নবী করীম (স)- কে বললেন, আমি সফরেও রোযা রেখে থাকি। হযরত নবী করীম (স) বললেন, সফর অবস্থায় তুমি ইচ্ছা করলে রোযা রাখতে পার নাও রাখতে পার। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮১৯)

৪৩।                     হযরত আবূ সালামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা)- কে বলতে শুনেছি, আমার উপর রমযানের কাযা রোযা থাকত, কিন্তু শাবান মাস আসার পূর্বে আমি তা আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহইয়া বলেন, হযরত নবী করীম (স)- এর খেদমতে অধিক ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি কাযা রোযা আদায়ের অবকাশ পেতেন না। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৬)

৪৪।                     হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, এটা কি ঠিক নয় যে, হায়েয শুরু হলে মেয়েরা নামায পড়তে বা রোযা রাখতে পারে? আর এও তাদের দ্বীনের কমতি বা লোকসান। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৭)

৪৫।                     উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, মৃত ব্যক্তির উপর রোযার কাযা থাকলে মৃতের ওয়ারিশগণ তার পক্ষ থেকে তা আদয় করবে। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৮)

৪৬।  হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমার পরম বন্ধু হযরত নবী করীম (স) আমাকে তিনটি বিষয়ের অসিয়ত করে গেছেন। (১)আমি যেন প্রতি মাসে (১৩, ১৪, ১৫ তারিখে) তিনটি রোযা রাখি, (২) চাশতের সময় দু’রাকআত নামায আদায় করি, (৩) রাত্রে নিদ্রা খাওয়ার আগেই যেন বেতেরের নামায আদায় করি। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৫৭)

৪৭।                     হযরত আবূ হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত রাসূলুল্লাহ (স)- কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যেন কখনও শুধু জুমআর দিনে রোযা না রাখে। তবে জুমআর আগের কিংবা পরের দিনও যোন রোযা রাখে। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৬২)

৪৮।                     হযরত আলকামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা)- কে জিজ্ঞেস করলাম, হযরত নবী করীম (স) রোযার জন্য কোন বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করতেন কি? তিনি বললেন না। তাঁর আমল ছিল স্থায়ী। হযরত নবী করীম (স)- এর মত শক্তি সামর্থ রাখে তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে? -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৬৪)

৪৯।                      হযরত হেশাম বিন ওরওয়া (রা) কর্তৃক বর্ণিত, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে রোযা রাখতেন এবং ওরওয়াও এ দিনগুলোতে রোযা রাখতেন।  -(বোখারী, হাদিস নং ১২৫০)

জেহাদ

১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জেহাদ করে না কিংবা জেহাদের বিয়ত সংকল্পও না রেখে মৃত্যুবরণ করে, তার মৃত্যু হল এক প্রকার মোনাফেকের মৃত্যু।- মুসলিম।

২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর পথে জেহাদকারী জেহাদ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত এমন এক রোযাদার ও নামাযে দণ্ডায়মান ব্যক্তির ন্যায় (সওয়াব লাভ করতে থাকবে), যে সর্বদা আল্লাহর আয়াত তেলাওয়াতে রত এবং অবিরত অক্লান্ত অবস্থায় রোযা নামাযে মশ্গুল থাকে।- বোখারী, মুসলিম।

৩।      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি (জেহাদের উদ্দেশে) আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, আর শুধু আমার প্রতি বিশ্বাস এবং আমার রাসূলদের সত্যতা স্বীকারের তাগিদই তাকে এ পথে বের করে, মহান আল্লাহ তার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাকে পুরস্কার অথবা গনীমতের মালসহ ফিরিয়ে আনবেন, অথবা বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।- বোখারী, মুসলিম।

৪।      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যার হাতে আমার প্রাণ সে মহান সত্তার শপথ করে বলছি, আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় বস্তু হল, আমি আল্লাহর পথে নিহত হই অতঃপর জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই আবার জীবনলাভ করি এবং আবার নিহত হই, পুনরায় জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই।- বোখারী, মুসলিম।

৫।      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও তার ্উপরের সব সম্পদ থেকে উত্তম।- বোখারী মুসলিম।

৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর পথে এক সকাল কিংবা এক বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও তার সব জিনিস থেকে অধিক উত্তম।- বোখারী, মুসলিম।

৭।      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে বান্দার পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলি মলিন হয়, তাকে দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না।- বোখারী।

৮।      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কোন কাফের ও তার হত্যাকারী (মোমেন) জাহান্নামে কখনও একত্র হবে না।- মুসলিম।

৯। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে সে ব্যক্তির জীবনই সকলের চেয়ে উত্তম, যে জেহাদের উদ্দেশে নিজের ঘোড়ার লাগাম ধরে সেটিতে আরোহণ করে বসে আছে, যখনই কোন সাহায্য প্রার্থীর ফরিয়াদ শুনতে পায় তৎক্ষণাৎ ছুটে যায়।- মুসলিম।

১০।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, একদিন ও এক রাত আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া এক মাস রাত জেগে নামাযে দণ্ডায়মান থাকার চেয়েও অধিক মূল্যবান।- মুসলিম।

১১।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোন মুজাহিদকে যুদ্ধ সরজ্ঞাম সরবরাহ করে, সে নিজেই যেন জেহাদে অংশ গ্রহণ করল।- মুসলিম।

১২।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে উত্তমরূপে তার পরিবার পরিজনের দেখা শোনা করে, সে যেন নিজেই জেহাদে অংশ গ্রহণ করল।- বোখারী, মুসলিম।

১৩।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই এ দ্বিন সর্বদাই বহাল এবং মুসলমানদের একটি দল কেয়ামন পর্যন্ত এ দ্বিনের জন্য জেহাদরত থাকবে।- মুসলিম।

১৪।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর পুনরায় দুনিয়ায় আসতে চাইবে না, যদিও দুনিয়ার যাবতীয সম্পদ তাকে প্রদান করা হয়। একমাত্র শহীদই শাহাদাত বরনের উচ্চ মর্যাদা দেখে আবার  দুনিয়াতে ফিরে আসার আকাঙ্খা করবে, যা২০২১ত সে আরও দশ বার শহীদ হতে পারে।- বোখারী, মুসলিম।

১৫।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, সবচেয়ে উত্তম আমল আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান স্থাপন করা।- মুসলিম।

১৬।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর রাস্তায় জান দেয়া ঋণ ব্যতীত প্রত্যেক গুনাহ মুছে দেয়।- মুসলিম।

১৭।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি একান্ত নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন, যদিও সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।- মুসলিম। 

১৮।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণী (দ্বীন) সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে, সে-ই আল্লহর পথে জেহাদ করছে।- বোখারী, মুসলিম।

১৯।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নাই, কিন্তু জেহাদ ও তার সংকল্প রয়েছে। অতএব তোমাদের জেহাদের জন্য আহবান করা হলে তাতে সাড়া দেবে।- বোখারী, মুসলিম।

২০।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমার উম্মতের একদল সর্বদা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে জেহাদে রত থাকবে এবং সে সব লোকের উপর বিজয়ী থাকবে, যারা তাদের বিরোধিতা করবে, অবশেষে তাদের সর্বশেষ দল মাসীহে দাজ্জালের সঙ্গে মোকাবেলা করবে।- আবু দাউদ।

২১।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জেহাদ কিংবা মুজাহিদের সাজসরঞ্জামের ব্যবস্থা করে নাই। কিংবা মুজাহিদের পরিবার পরিজনের দেখা শোনাও করে নাই, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের (মৃত্যুর) পূর্বে যে কোন বিরাট বিপদে পতিত করবেন।- আবু দাউদ।

২২।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, জান, মাল ও মুখ দ্বারা তোমরা মুশরিকদের সঙ্গে জেহাদ কর।

২৩।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেক ব্যক্তির আমলের সমাপ্তি ঘটে, কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, কেয়ামত কায়েমের পূর্ব পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কবরেও সে নিরাপদ থাকে।

- তিরমিযী, আবু দাউদ।

২৪।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামান্য সময়ও আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করেছে, তার জন্য বেহেশত অবধারিত।- তিরমিযী।

২৫।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জখম হয়েছে কিংবা যন্ত্রণা ভোগ করেছে, সে কেয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার ক্ষত দুনিয়ার ক্ষত অপেক্ষা অধিক ফুটে উঠবে, তার রক্তের বর্ণ হবে জাফরানের আর খোশবু হবে মেশকের মত।

- আবু দাউদ।

২৬।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির শরীরে আল্লাহর রাস্তায় থাকা অবস্থায় ফোঁড়া বের হবে, তার উপর শহীদের চিহ্ন থাকবে।- নাসাঈ।

২৭।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। এক প্রকার চক্ষু যা আযাবের ভয়ে রোদন করেছে, আরেক প্রকার চক্ষু যা আল্লাহর রাস্তায় জাগ্রহ থেকে পাহারা দিয়েছে।

- তিরমিযী।

২৮।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর রাস্তায় একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া এক হাজার দিনের এবাদতের চেয়েও উত্তম।- তিরমিযী নাসাঈ।

২৯।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমার সম্মুখে এমন তিন প্রকারের লোকদের উপস্থিত করা হয়েছে, যারা সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশ করবে, তাদের একদল শহীদ সম্প্রদায়।- তিরমিযী।

৩০।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ নিকট শহীদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে, ১) শরীরের প্রথম ফোঁটা রক্ত ঝরতেই তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং প্রাণ বের হওয়ার প্রাক্কালে বেহেশতের মধ্যে তার অবস্থানস্থল তাকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেয়া হবে, ২) তাকে কবর আযাব থেকে হেফাজতে রাখা হবে, ৩) কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা থেকে হেফাজতে রখা হবে, ৪) তার মাথায় সম্মান মর্যাদার মুকুট পরানো হবে, তাতে খচিত একটি ইয়াকুত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, সে সব কিছু থেকে উত্তম, ৫) তার বিবাহদীনে বড় বড় চক্ষু বিভিষ্ট বাহাত্তর জন হুর দেয়া হবে, ৬) সত্তর জন নিকট আত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে।- তিরমিযী, ইবনে মাজা।

৩১।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জেহাদের কোন প্রকার চিহ্ন ব্যতীত আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করব, সে ত্র“টিযুক্ত দ্বীন নিয়েই আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে।- তিরমিযী, ইবনে মাজা।

৩২।        রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, শহীদ হত্যার ব্যথা ততটুকু অনুভব করে, যতটুকু তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড় অনুভব করে থাক।- তেরমিযী, নাসাঈ, দারেমী।

৩৩।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট দুটি চিহ্নের চাইতে অন্য কিছুই এত প্রিয় হয়ন। আল্লাহর রাস্তায় শরীরে আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন এবং দ্বিতীয় হল, আল্লাহর ফরযসমূহ থেকে কোন একটি ফরয আদায় করার চিহ্ন।- তিরমিযী।

৩৪।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা হজ্জ, ওমরা কিংবা জেহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশে সামুদ্রিক সফরে বের হয়ো না। কেননা সমুদ্রের নীচে আগুন এবং আগুনের নীচেও সমুদ্র আছে।- আবু দাউদ।

৩৫।                       রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেউ আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে বের হয়ে যে অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করুক, সে শহীদ পরিগণিত হবে এবং তার জন্য জান্নাত অবধারিক।- আবু দাউদ।

৩৬।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, মুজাহিদ গাজী তার জেহাদের পূর্ণ সওয়াব লাভ করবে, আর জেহাদের জন্য মাল সম্পদ দানকারী মাল প্রদান ও জেহাদ উভয়ের সওয়াব লাভ করবে।

৩৭।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, একটি বস্তু আছে যা দ্বারা আল্লাহ জান্নাতের মধ্যে তাঁর বান্দার একশ সোপান বুলন্দ করবেন এবং প্রত্যেক দুই সোপানের মধ্যবর্তী ব্যবধান আসমান যমীনের দূরত্বের সমান, তা হল আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ।- মুসলিম।

৩৮।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বয়ং জেহাদে অংশ গ্রহণ করে এবং তাতে মালও ব্যয় করে, সে ব্যক্তি প্রত্যেক টাকার বিনিময়ে সাত লাখ টাকার সওয়াব পাবে।- ইবনে মাজা।

৩৯।                      রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যুদ্ধ কৌশলমাত্র।- বোখারী, মুসলিম।

৪০।                     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, সাবধান অতি বৃদ্ধ, ছোট শিশু এবং কোন মহিলাকে হত্যা করো না।- আবু দাউদ।